গ্রাম-বাংলার পরিচিত বথুয়া শাক চোখে পড়েনা

মো. আমিনুল হক, নান্দাইল

প্রকাশিত: ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০৬:৩৮ পিএম


গ্রাম-বাংলার পরিচিত বথুয়া শাক চোখে পড়েনা

ছবিঃ একাত্তর পোস্ট

একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বথুয়া বা বেথো শাক গ্রাম-বাংলার খুব পরিচিত একটি শাক। প্রতিটি মানুষের কাছে খুবই পরিচিত শাক এটি। খেতেও বেশ মজাদার। কিন্তু গ্রাম-বাংলার এই পরিচিত বথুয়া শাক এখন খুব বেশী চোখে পড়েনা।

জমিতে আগাছার মত আপনা আপনি জন্ম নেয় বথুয়া শাক। আগাছা হিসেবে বথুয়া শাক পরিচিত হলেও খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ শীতকালীন শাক।কিন্তু এখন আর চোখে পড়েনা সেই বথুয়াশাক।

গ্রামবাংলার প্রতিটি গম ক্ষেত, মরিচ ক্ষেত এবং বেগুন ক্ষেতে প্রচুর পরিমানে বথুয়া শাক পাওয়া যেত।এটি বেথুয়া,বাইত্তা,বথুয়াশাক,বাইথ্যা শাক, বৌতা, ভাত্তা, বেথে শাক, ভাইত্যা শাক, ভেতে শাক প্রভৃতি স্থানীয় নামে পরিচিত।

উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Chenopodium album। Goosefoot and fat-hen বা Lamb’s quarters বলে ইংরেজিতে।

ময়মনসিংহের নান্দাইলে এখন আর খুব বেশী চোখে পড়েনা বথুয়া শাক। একসময় চরাঞ্চলসহ নান্দাইলের প্রতিটি এলাকায় বথুয়া শাক পাওয়া যেত। সবার কাছেই শাক হিসাবে পরিচিত ছিল এটি। এখন সবাই যেন এই শাকের কথা ভুলেই গেছে।

বথুয়া শাকের গড় উচ্চতা ২-৩ ফুট। এটি বিরুত্‍ জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছের পাতার রং ফ্যাকাসে সবুজ। কান্ডে উঁচু শিড়া ও বেগুনি রেখা দেখা যায়। পাতার উপর মোমের প্রলেপ থাকায় জল ধরেনা। পাতার নিচেও সাদাটে আস্তরণ থাকে। কাণ্ডে উঁচু শিরা ও বেগুনি রেখা দেখা যায়। চৈত্র-বৈশাখে এদের বীজ মাটিতে ঝরে পড়ে। গাছে প্রচুর বীজ হয়।

এ শাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, লৌহ, ফসফরাস ও জিংক এবং গুরুত্বপূর্ণ ৮টি অ্যামাইনো এসিড থাকে। বথুয়া শাকে থাকা পটাশিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হজম শক্তি বাড়ায়, রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে, কনজাংটিভাইটিস নিরাময়ে সাহায্য করে।

কিডনিতে পাথর হলে বথুয়া শাকের জুস খুব উপকার করে।এতে কিডনিতে থাকলে পাথর গলতে শুরু করে। লিভারের সমস্যা, পিত্ত, মলাশয়ের সমস্যা দূর করে। মুখে ঘা হলে বথুয়া শাক চিবিয়ে খেলে বা রান্না করে খেলে ঘা সেড়ে যায়।

বথুয়া শাকে পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। একই সাথে শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়। এই শাক রক্ত পরিশোধক হিসেবেও কাজ করে।

উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরশ্রীরামপুর গ্রামের শরাফত বেগুন ক্ষেতে ১০ শতাংশ, ফারুক ২০ শতাংশ,আব্দুল মালেক ১০ শতাংশ এবং নান্দাইল ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের হতদরিদ্র সেলিনা বাড়ির সামনে পতিত ৫ শতাংশ জমিতে বথুয়া শাক চাষ করেছেন।বাজারে প্রতিটি বথুয়া শাকের আটি ৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন তারা।এতে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

বীরকামট খালী দক্ষিণ বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী পল্লী চিকিৎসক মো.গোলাম মোস্তফা বলেন,অনেকদিন পর বাজারে বথুয়া শাক চোখে পড়লো। লোভ সামলাতে পারলামনা। ২০ টাকা দিয়ে ৪ টি আটি কিনেছি।

বীরকামট খালী গ্রামের আশি উর্ধ বৃদ্ধা হালিমা খাতুন বলেন,বথুয়া শাক খুব মজাদার।আমাদের সময়ে প্রচুর পরিমানে বথুয়া শাক পাওয়া যেত। কিন্তু এখন আর চোখে দেখিনা এই বথুয়া শাক।

নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, গ্রামবাংলার একটি পরিচিত শাক হলো বথুয়া শাক। পূর্বে প্রতিটি ফসলের ক্ষেতে আগাছা হিসাবে বথুয়া শাক জন্ম নিত।কিন্তু এখন অবাধে ফসলের জমিতে কিটনাশক ব্যবহারের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে শীতকালীন এই বথুয়া শাক।

এখন অনেকেই চাষের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কৃষক বথুয়া শাকের চাষ করছেন।আর চাষের মাধ্যমে এখন বিলুপ্ত হওয়া এই শাকের আবাদ করা যেতে পারে। 

Link copied