স্কুলের ঘর বিক্রি ও এফডিআর’র টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

মোঃ সাইফুল ইসলাম তানভীর, সিংগাইর(মানিকগঞ্জ)

প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৩, ০৫:৪২ পিএম


স্কুলের ঘর বিক্রি ও এফডিআর’র টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

ছবিঃ একাত্তর পোস্ট

একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ পাওয়ার পর ফের স্কুলের পুরনো টিনের ঘর বিক্রি ও এফডিআর‘র টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে  প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে। নানা বির্তকিত কর্মকান্ডে জড়িত আরিফুর রহমান মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার উত্তর জামশা বশির উদ্দিন ফাউন্ডেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

স্কুলের ঘর বিক্রি ও এফডিআর‘র টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সোমবার (১৫ মে) দুপুরে স্থানীয় দুই সংবাদকর্মীর ওপর চড়াও হন তিনি ও তার দুই ছেলে- স্বাধীন (২২) ও আমান (২০)।

এ ঘটনায় সাংবাদিক সোহরাব হোসেন বাদি হয়ে রাতেই তাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন।

জানা গেছে, এর আগে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা হওয়ায় গত ৮ বছর যাবত তার সরকারি বেতন-ভাতা বন্ধ থাকলেও তিনি প্রধান শিক্ষকের চেয়ার আকড়ে ধরে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন।

সম্প্রতি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন ও এনটিআরসিএ’র নিয়োগপত্র ছাড়াই ৩ শিক্ষক নিয়োগ দেন তিনি। সেই সাথে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আরো দু’কর্মচারী নৈশ প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। বিনিময়ে ৫ জনের কাছ থেকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন প্রধান শিক্ষক।

এ নিয়ে দেশের একাধিক দৈনিক পত্রিকাকে গত ৫ ফেব্রয়ারি “ ঘুষে শিক্ষক -কর্মচারী নিয়োগ ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে ওই নিয়োগ স্থগিত করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা এমপিও শীট হতে নাম ও ইনডেক্স নম্বর কর্তনের আবেদন জানান।

এদিকে, অবৈধভাবে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অন্যায় কাজের জন্য ভূল স্বীকার করে স্কুল পরিচালনা কমিটির কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান। সেই সাথে নিজ দায়িত্বে ওই শিক্ষক ও কর্মচারীর এমপিও বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এছাড়া  শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কোনো মিটিং না হলেও রেজুলেশনে সভাপতির স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে  লিখিতভাবে দায় স্বীকার করেন আরিফুর রহমান।

ওই আলোচনার রেশ না কাটতেই ফের স্কুলের পুরনো টিনের ঘর বিক্রির ৩ লাখ ৯৫ হাজার ও এফডিআর’র ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাত করেন ওই প্রধান শিক্ষক।

সরেজমিন ওই স্কুলে গিয়ে সহকারি শিক্ষকদের সাথে কথা বলে এর সত্যতা মিলে। প্রধান শিক্ষককে স্কুলে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নিতে তার বাড়িতে যান ভোরের কাগজ প্রতিনিধি মাসুম বাদশাহ ও নয়াদিগন্ত সংবাদদাতা সোহরাব হোসেন।

এ সময় অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে স্কুলের ঘর বিক্রি ও এফডিআর‘র টাকা স্কুলের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এর এক পর্যায়ে বিভিন্ন পত্রিকায় পূর্বের প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে শিক্ষক আরিফুর রহমানের ছেলে স্বাধীন ও আমান সংবাদকর্মীদের ওপর চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পুনরায় তার বাবার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার সংবাদ প্রকাশ করা হলে মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকিও দেন তারা।

সাংবাদিকের করা জিডি‘র বিষয়ে সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বশির উদ্দিন ফাউন্ডেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রধান শিক্ষকের ধারাবাহিক অপকর্মগুলো দুঃখজনক। সংবাদকর্মীদের সাথে অসদাচরণ ন্যাক্কারজনক ও গর্হিত কাজ বলেও তিনি মন্তব্য করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ বি এম আঃ হান্নান বলেন, অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া ৩ শিক্ষক ও ২ কর্মচারীর এমপিও বাতিলের জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে। পুরানো টিনের ঘর বিক্রি ও এফডিআর’র টাকা আত্মসাতের বিষয়টি আমি অবগত নই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Link copied