সীমান্তে হত্যা, লাশের অপেক্ষার অবসান হলো ৯ মাস পর

মঞ্জু হোসেন, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৩, ০৯:৫৪ এএম


সীমান্তে হত্যা, লাশের অপেক্ষার অবসান হলো ৯ মাস পর

ছবিঃ একাত্তর পোস্ট

একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পঞ্চগড়ে ভারতীয় সীমান্তের ভেতরে গরু চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার প্রায় ৯ মাস পর বাংলাদেশি যুবক আব্দুস সালামের মরদেহ ফেরত পেয়েছে পরিবারের সদস্যরা। 

শনিবার (২০ মে) সন্ধ্যার দিকে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা সীমান্তের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তার মরদেহ গ্রহণ করা হয়। এ সময় বিজিবি, বিএসএফ সদস্য ছাড়াও জনপ্রতিনিধি ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সালামের বড়ভাই আলিম হোসেন বলেন, আমার ভাইয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে পরে জানতে পারি তাকে গরু চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে আমার ভাইয়ের লাশ ফেরতের জন্য বিজিবিসহ বিভিন্ন দফতরে ঘুরে ফিরেছি। দীর্ঘদিন পর হলেও স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় লাশ ফেরত পাওয়া গেছে।

পরে রাতেই তার মরদেহ সাতমেরা ইউনিয়নের কাহার পাড়ার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সালামের মরদেহ পৌঁছালে স্ত্রী ও মায়ের আহাজারিতে বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। তাকে শেষ বারের মতো দেখতে ছুটে আসেন স্থানীয়রা। জানাজা শেষে মরদেহ স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস পর নিখোজ আব্দুস সালামের মরদেহ পেয়েছে তার পরিবার। মরদেহ নিয়ে আসার সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুলিশও ছিল।

নিহতের পরিবার জানায়, গত বছরের ২৪ আগস্ট ভোরে নীলফামারী-৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন পঞ্চগড় উপজেলা সদরের অমরখানা সীমান্তের বিপরীত ভারতের বড়ুয়াপাড়া সীমান্ত এলাকায় সালামসহ তিন যুবককে ধাওয়া দেন স্থানীয়রা। এ সময় অন্য দুই জন পালিয়ে গেলেও সালামকে গরু চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করেন ভারতের নাগরিকরা। পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও ভারতীয় পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।

ঘটনাটি ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়া প্রচার হলে নিহতের পরিবার বিষয়টি জানতে পারে এবং মরদেহ ফেরতের জন্য বিজিবির মাধ্যমে ভারতের কাছে আবেদন করে। আইনি জটিলতা এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে নিহতের এক ভাই ভারতে গিয়ে তার মরদেহ নিয়ে আসে।

তবে মরদেহ আনার খরচ সালামের পরিবারের পক্ষ থেকেই করা হয়েছে এবং পরিবারের পক্ষ থেকেই মরদেহ নিয়ে আসা হয়।

সালামের মা আলেমা খাতুন বলেন, আমার ছেলে ওইদিন রাতে ভাত খেয়ে শুয়ে পড়েছিল। পরে স্থানীয় দুইজন তাকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে সকালে উঠে শুনি সালাম বাসায় নেই। ওইদিন দুপুরে তার মৃত্যুর সংবাদ পাই। আমার ছেলেকে যারা পিটিয়ে মারল, আল্লাহ তুমি তাদের বিচার করো।

সাতমেড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি জানান, মরদেহটি ভারতের জলপাইগুড়ি হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থায় ( ফ্রিজিং করে) রাখা ছিল। এরপর নিহত সালামের মেজ ভাই আলিম উদ্দীন ভিসা পাসপোর্টের মাধ্যমে ভারতে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন। দীর্ঘ ৯ মাস পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করে বিএসএফ ও ভারতীয় পুলিশ। 

Link copied